বসন্তের জন্য অপেক্ষা

Image
  প্রিয় ঋতু কি কেউ জিজ্ঞেস করলে বিভ্রান্ত হয়ে পড়বো। কোনটা প্রিয় ঋতু? সবগুলোই যে প্রিয়! আমার বর্তমান ঠিকানা যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম অঙ্গরাজ্য ডেলওয়্যার।এই ডেলওয়্যারে প্রতিটা মৌসুম ভিন্নতা নিয়ে আসে। যেহেতু এখানে প্রতিটা ঋতুর একটা   স্বতন্ত্র অস্তিত্ব  আছে তাই তাদের প্রতি আমার পৃথক পৃথক ভালোবাসা জন্মে গেছে। প্রতিটা ঋতুই নিয়ে আসে অনন্য আমেজ, প্রকৃতি সাজে অনুপম সাজে। সেই সাজ  যেন অন্য ঋতুগুলোর চেয়ে একেবারে ভিন্ন। এই যেমন এখন গুটিগুটি পায়ে এসেছে ঋতুরানী বসন্ত: আকাশে-বাতাসে ঝঙ্কৃত হচ্ছে তার আগমনী সুর, আমি সেই সুর শুনতে পাই।  সবগুলো ঋতু প্রিয় হলেও নিজেকে শীতকালের বড় ভক্ত বলে দাবী করতে পারিনা। গ্রীষ্মপ্রধান দেশে যার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা, তার পক্ষে ঠান্ডা আবহাওয়াতে মানিয়ে নেওয়া কার্যত কষ্টকর, বিশেষত সেই শীতকাল যদি চার-পাঁচ মাস স্থায়ী হয়। তাই শীতকাল বিদায় নিয়ে যখন বসন্তকাল আবির্ভূত হয় তখন এক একদিন জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ভাবি, "এত্ত সুন্দর একটা দিন দেখার সৌভাগ্য হলো আমার!" শোবার ঘরের জানলা দিয়ে প্রভাতের বাসন্তী রঙের রোদ এসে ভাসিয়ে দেয় কাঠের মেঝে, সাদা আরামকে

হাঁটাহাটি

ঢাকায় চাইলেও তেমন একটা হাঁটতে পারতাম না। নানা কারণে পারতাম না। নিরাপত্তার কারণতো আছেই - এখন ভাবলে মনে হয় ওটাই সবচাইতে বড় কারণ ছিল। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হতো সন্ধ্যার পর হাঁটি। ইচ্ছে পূরণ হয়নি কখনও ঢাকা থাকা অবস্থায়। মাঝে মাঝে ছাদে হাঁটতে যেতাম কিন্তু আজকাল অনেক এপার্টমেন্ট বিল্ডিং এর ছাদগুলো তালা মেরে রাখা হয় - কি কারণে কে জানে!

ছোটবেলায় অবশ্য হাঁটতাম - বাবার সাথে সংসদ ভবনে হাঁটতে যেতাম ছুটির দিনে। নরম, কঁচি ঘাসে খালি পায়ে হাঁটতাম। সদ্যকাটা ঘাসের ডগা পায়ের নিচে সুড়সুড়ি দিয়ে যেত। অনেক সময় খালি পায়ে বাবা আর ভাইয়ের সাথে ব্যাডমিন্টনও খেলতাম সবুজ ঘাসের চাদরে জুতোহীন পায়ে।

বড় হবার পর হাঁটাহাটি কমে গেল। কিন্তু এই পরবাসে এসে প্রচুর হাঁটতে পারছি। কারণে, অকারণে হাঁটি। একটা সময় মিনেসোটার ডাউনটাউন মিনিয়াপলিস থাকতাম - সেসময় সবজায়গায় হেঁটেই যেতাম। ডাক্তারের চেম্বার, লাইব্রেরি, দোকানপাট সবখানে হেঁটেই যেতাম - নাগালের কাছে সবকিছু থাকাতে হাঁটার সুযোগটাও পেতাম বেশি। এক মাইলের ভিতর ব্যাংক, ক্লিনিক, লাইব্রেরি, ডিপার্টমেন্ট স্টোর সবই ছিল।

ছুটিতে কোথাও গেলে খুব হাঁটা হয়, বিশেষ করে বড় শহরে যেখানে হেঁটে দেখবার মতন অনেক কিছু পাওয়া যায়। গ্রীষ্মকালেও এখানে খুব হাঁটা হয়। পার্কে গিয়ে বাচ্চা, বুড়োদের সাথে বড়ররাও হাঁটে, খেলে... দেখতে বেশ লাগে। লম্বা একটা শীতকাল পাড়ি দেয়ার পর খোলা আকাশের নীচে প্রাণভরে নিশ্বাস নেয়া আর নিজের পা দু'টোকে নিয়ে প্রকৃতি দেখার মধ্যে অন্যরকম একটা আনন্দ আছে।

হাঁটাহাটি তো স্বাস্থ্যের জন্যও ভাল। শীতকালে যখন বাইরে হাঁটতে যেতে পারি না তখন এপার্টমেন্ট বিল্ডিং এর লম্বা হলওয়ে ধরে প্রায় প্রতিদিন হাঁটি। খুব ভাল লাগে, নিজেকে হালকাও মনে হয়। এখানে তো শীতকালে বাইরে যাওয়া মানে গায়ে মোটা জোব্বামার্কা কোট, হাতে মোজা, পায়ে জুতা, মাথায় টুপি।ওহ্‌, আর হাতে, পকেটে অবশ্যই টিস্যু... কনকনে ঠান্ডা বাতাসে আমার নাক, চোখ থেকে অনবরত পানি ঝরে।

গায়ে কাপড় চাপিয়ে ওজন ১০ পাউন্ড বাড়িয়ে আর যাই হোক ফুরফুরে মেজাজে ঘরের বাইরে হাঁটতে পারিনা আমি। তাই অপেক্ষা করি কবে শীতল দিনগুলো শেষ হয়ে গাছে নতুন পাতা, ফুল আর বাতাসে পাখির ডাক ভেসে আসবে...!


Comments

Popular posts from this blog

A personal journey through the captivating landscape of Bengali literature

Cashmere: Soft, luxurious, sought-after

January Blues