বসন্তের জন্য অপেক্ষা

Image
  প্রিয় ঋতু কি কেউ জিজ্ঞেস করলে বিভ্রান্ত হয়ে পড়বো। কোনটা প্রিয় ঋতু? সবগুলোই যে প্রিয়! আমার বর্তমান ঠিকানা যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম অঙ্গরাজ্য ডেলওয়্যার।এই ডেলওয়্যারে প্রতিটা মৌসুম ভিন্নতা নিয়ে আসে। যেহেতু এখানে প্রতিটা ঋতুর একটা   স্বতন্ত্র অস্তিত্ব  আছে তাই তাদের প্রতি আমার পৃথক পৃথক ভালোবাসা জন্মে গেছে। প্রতিটা ঋতুই নিয়ে আসে অনন্য আমেজ, প্রকৃতি সাজে অনুপম সাজে। সেই সাজ  যেন অন্য ঋতুগুলোর চেয়ে একেবারে ভিন্ন। এই যেমন এখন গুটিগুটি পায়ে এসেছে ঋতুরানী বসন্ত: আকাশে-বাতাসে ঝঙ্কৃত হচ্ছে তার আগমনী সুর, আমি সেই সুর শুনতে পাই।  সবগুলো ঋতু প্রিয় হলেও নিজেকে শীতকালের বড় ভক্ত বলে দাবী করতে পারিনা। গ্রীষ্মপ্রধান দেশে যার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা, তার পক্ষে ঠান্ডা আবহাওয়াতে মানিয়ে নেওয়া কার্যত কষ্টকর, বিশেষত সেই শীতকাল যদি চার-পাঁচ মাস স্থায়ী হয়। তাই শীতকাল বিদায় নিয়ে যখন বসন্তকাল আবির্ভূত হয় তখন এক একদিন জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ভাবি, "এত্ত সুন্দর একটা দিন দেখার সৌভাগ্য হলো আমার!" শোবার ঘরের জানলা দিয়ে প্রভাতের বাসন্তী রঙের রোদ এসে ভাসিয়ে দেয় কাঠের মেঝে, সাদা আরামকে

উবার

উবার (Uber) একটি ইংরেজী শব্দ। আমার অভিধানে খুব বেশি আগে যোগ হয়নি এই শব্দটি। এর মানে হচ্ছে দারুণ বা অসম্ভব ভাল। যাই হোক, উবার শব্দটি প্রথম জানলাম New York গিয়ে ২০১৩ সালে এক বান্ধবীর বদৌলতে। ট্যাক্সি খুঁজে পাচ্ছিলাম না, তখন ও বলল, "উবার এর আ্যাপ ডাউনলোড করে ওখান থেকে ট্যাক্সির জন্য রিকোয়েস্ট পাঠাও!" এরপর যতবার New York অথবা Washington, D.C. যাওয়া হয়েছে দেখা গেছে আমরা উবার ব্যবহার করেছি। এখন উবার পৃথিবীর ৫৮টি দেশে, প্রায় ৩০০টি শহরে চলছে।



গতকাল আমি প্রথম আমার মোবাইল ফোন থেকে উবারে রিকোয়েস্ট পাঠালাম। আ্যাপে উঠল ড্রাইভারের নাম, ছবি, গাড়ির মডেল, সে কোথায় আছে এবং আমার বাড়িতে পৌঁছতে তার কত মিনিট লাগবে। খুব উচ্চপ্রযুক্তির ব্যবহার স্বীকার করতেই হবে! গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে বলতেও হল না কোথায় যাব, আ্যাপ থেকে যখন রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি তখন সেখানে ঠিকানা দিয়েছিলাম আর সেটি পৌঁছে গেছে ড্রাইভারের কাছে। ভাড়া দেয়ার ঝামেলাও কম। একাউন্ট সেট আপ করবার সময় সেখানে ক্রেডিট কার্ড নাম্বার দিতে হয়। একটি রাইডের পর সেই কার্ডটি চার্জ করে উবার। সাধারণ ক্যাবে উঠলে ভাড়া নিয়ে ঝামেলা হয় যেমন অনেক ক্যাব ড্রাইভারই কার্ড নিতে চায়না, শুধু ক্যাশ নিবে। রিসিটও দেয় না। এই দেশে অনেকে অবৈধভাবে ট্যাক্সি চালায় বড় শহরগুলোতে, ক্যাশ নেয়া এবং রিসিট না দেয়া আসলে আইনকে ফাঁকি দেয়ার কয়েকটি উপায়। তারপর দিতে হয় আবার আলাদা করে টিপস। ট্যাক্সি কল করলে সবসময় সময়মত আসেও না। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ ব্যথা হয়ে যায়।

Washington, D.C.তে গিয়ে একবার উবার এ রিকোয়েস্ট পাঠাবার পর একটি মেয়ে এল আমাদের তুলতে। ঐ প্রথম আমি কোন মেয়ে ট্যাক্সি ড্রাইভার দেখলাম। উবারকে ঠিক ট্যাক্সিও বলা যায়না কারণ ড্রাইভাররা তাদের নিজস্ব গাড়ি চালায়। নিজস্ব গাড়ি হবার কারণে বেশিরভাগ সময় গাড়িগুলো হয় চকচকে ঝক্ঝকে। অনেকে আবার উবার চালায় বাড়তি কিছু টাকা আয় করতে, এটি তাদের ফুল-টাইম পেশা নয়। গতকাল যখন আমি আর আমার মেয়ে শপিং মলে যাবার জন্য উবার এ রিকোয়েস্ট পাঠালাম তখন এক ভদ্রলোক এলেন একটি কাল রঙের মার্সিডিজ-বেনজ্ এ করে আমাদের তুলতে!! গাড়ি দেখেই বোঝা গেল যে সে পার্ট-টাইম উবার এর জন্য কাজ করছে। মল থেকে ফেরার পথে উবার এ রিকোয়েস্ট পাঠাবার পর আসলেন এক বাংলাদেশী ভদ্রলোক, যিনি কথায় কথায় জানালেন যে তিনি পার্ট-টাইম উবার এর জন্য কাজ করছেন। শুরু করেছেন মাত্র দেড় মাস আগে। অনেকে শুধু ছুটির দিনগুলোতে অথবা সন্ধ্যাবেলাটাতে উবার চালায় যখন কাজ ফিরতি মানুষ খোঁজে ঘরে ফিরবার উপায়।

সাধারণ ট্যাক্সি মালিক এবং চালকরা অনেকেই ক্ষিপ্ত যদিও উবার এর উপর। এর কারণ বড় শহরগুলোতে উবার দ্রুত জায়গা করে নিচ্ছে তাদের অত্যাধুনিক এবংসুবিধাজনক বৈশিষ্টের কারণে। কিন্তু আমার মত অনেক ভোক্তারা খুব খুশি কারণ ট্যাক্সিতে চলাচল অনেক সহজ করে দিয়েছে আমাদের জন্য উবার।

Comments

Popular posts from this blog

A personal journey through the captivating landscape of Bengali literature

Cashmere: Soft, luxurious, sought-after

January Blues